বৃহস্পতিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৮

           একটি মিষ্টি ভালবাসার গল্প

দি ফ্লাওয়ার্স কে. জি. এন্ড হাই স্কুল এ আমি শিক্ষাজীবনের ১১ টি বছর কাটিয়েছি। এই স্কুলেই আমি দেখা পাই আমার সপ্নকন্যার। কিন্তু স্কুলে থাকা অবস্থায় আমি তার প্রেমে পড়ি নি। আজকে আমি আমার সেই সপ্নকন্যার কথা বলব। কিভাবে আমরা এক হলাম সেই গল্প বলব।
ক্লাস এ বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারতে ছিলাম। হঠাত দেখি ক্লাস এ একটা নতুন মেয়ে ঢুকছে। দেখতে মোটামোটি কিন্তু চেহারার কোথায় জানি একটা মায়া মায়া ভাব আছে। একই সাথে পাথরের মতো নির্লিপ্ত। আমি একটু চঞ্চল টাইপের ছেলে ছিলাম। ক্লাস এ শয়তানির জন্য অনেক শাস্তি পাইতাম। তো নতুন মেয়েটাকে উত্ত্যাক্ত করার চেষ্টায় ছিলাম। এমন সময় শুনি মেয়েটার নাম পিয়া। মেয়েটা নাকি লৌহমানবী টাইপের। বেশি কিছু করলে বাসায় গিয়ে মা কে বলে দিবে। এই ভয়ে উত্ত্যাক্ত করার সাহস পেলাম না আর। মেয়েদের সাথে এমনিতে আমি কথা কম বলতাম। কয়েকজন ছিল হাতেগনা তাদের সাথেই কথা বলতাম।
আমার এক সহপাঠীর সাথে আবার মেয়েদের খুব ভাব ছিল। ওর কাছ থেকে জানতে পারলাম মেয়েটার কোন ছেলেফ্রেন্ড নাই। শুনে আমার কেন জানি ওর সাথে কথা বলতে ইচ্ছা হল। কি কথা বলব টা মনে মনে অনেকবার প্র্যাকটিস করে নিলাম। আমাদের টিফিনের সময় ছিল মাত্র ১৫ মিনিট। মনে মনে নিজেকে বললাম যা বলবার টিফিনের সময় ই বলব। কারণ তখন ছেলেদের কেউ ক্লাস এ থাকে না। কেউ যদি আমাকে দেখে একটা মেয়ের সাথে ফ্লারট মারতেসি তাহলে টিজ খাইতে খাইতে জীবন শেষ হয়ে যাবে।
সাহস সঞ্চয় করে ওর নাম ধরে ডাকলাম।
“পিয়া”
“হূম বল।“
“কেমন আছ?”
“এইত ভাল”
“শুনলাম তোমার নাকি কোন বেস্টফ্রেন্ড নাই?”
“কে বলসে? আমার তো বেস্টফ্রেন্ড আছে।“
“তা সে কি কোন ভাগ্যবান নাকি ভাগ্যবতী?”
“সে একজন ভাগ্যবতী।“ (লজ্জায় লাল হওয়া শুরু হইসে)
“আমার ও না কোন ভাগ্যবতী নাই।“ (এই কথাটা আমার প্র্যাকটিসে ছিল না। কিন্তু মুখ দিয়ে বের হয়ে গেসে। নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলাম।
তারপর উঠে চলে আসলাম।
কিন্তু আমার এই ফ্লারটিং এর ঘটনা পুরা ক্লাস জেনে গেল। আমি আসলে ওইরকম মাইন্ডে কথাগুলা বলি নাই। তারপর আর কি ক্লাস এ ঢুকলেই শুরু হয়ে যেত হারামি ফ্রেন্ডগুলার যন্ত্রণা। এই যন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য মেয়েদের সাথেই কথা বলা বন্ধ করে দিলাম।
হয়ত দেখা যেত আমি দাঁড়িয়ে পড়া দিচ্ছি এমন সময় পিয়া আমার দিকে তাকাইসে। আর অম্নি বন্ধুরা শুরু করে দিল।
“দোস্ত ও তো পটে গেছে। তোর প্রেমে হাবুদুবু খাচ্ছে।“
আমি পাত্তা না দিতে চেস্টা করি। ফ্রেন্ডশিপ ডেতে অনেকগুলা ফ্রেন্ডশিপ বেল্ট মারছিলাম আরচিস থেকে।(আমি ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড বেশিরভাগ দোকান থেকে মেরেই ফ্রেন্ড দের দিছি)
শুধু একটা বেল্ট নিজের টাকা দিয়ে কিনছিলাম। পিয়া কে দিব বলে। কেন যেন আমার মন ওকে চুরি কয়রা বেল্ট দিতে সায় দিল না।
পরের দিন ক্লাস এ গিয়ে ওর অপেক্ষায় বসে ছিলাম। ও আসল কিন্তু উইশ করব কিভাবে বুঝতে পারছিলাম না। হারামি বন্ধুগুলা শকুনের চোখে তাকিয়ে ছিল। উপায় না দেখে অপেক্ষা করতে থাকলাম কখন সুযোগ আসে। কিন্তু যখনই সুযোগ আসে তখন হাত পা কাঁপতে থাকে। হৃৎপিণ্ডের স্পন্ধন থেমে যায়। মুখে যেন কেউ সেলাই করে দিয়েছে। এভাবে করতে করতে স্কুল ছুটি হয়ে গেল। উপায় না দেখে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম ও যখন সিঁড়ি দিয়ে নামবে তখন দিয়ে দিব। যেই ভাবা সেই কাজ। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে ওকে উইশ করলাম। ওর উত্তর ছিলঃ
“এতক্ষণ পরে!!!”
এর উত্তরে কি বলব জানা ছিল না। ও চলে গেল। এরপর থেকে ক্লাস এ প্রায় ই ও আমার দিকে তাকিয়ে থাকত। আমি আড় চোখে দেখতাম। কিন্তু কথা বলার সুযোগ পেতাম না। যাও বা সুযোগ পেতাম তা ২ ১ কথার মধ্যে সিমাবদ্ধ থাকত। আমার অন্য ফ্রেন্ডরা যখন ওর সাথে কথা বলত তখন হিংসা হত। কেন হত তাও জানতাম না। আসলে বয়স কম ছিল তো ভালবাসার মানেটাই বুঝতাম না। এভাবেই কেটে গেল ১ বছর।
ক্লাস ৯ এ আমি অনেক খারাপ অভ্যাস আয়ত্ত করেছিলাম। স্যারের কাছে পড়ার কথা বলে টাকা নেওয়া, সিগারেট খাওয়া, এরকম কাজ করে পড়ালেখা মাথায় তুলেছিলাম। ফলাফল ও খুব খারাপ হল। বার্ষিক পরীক্ষায় অনেক কম নাম্বার পেলাম সব বিষয়ে। তবে সবথেকে বড় শক হয়েছে তখন যখন আব্বু রেজাল্ট আনতে গিয়ে জানতে পারল আমি এতদিন যে স্যারের কাছে পড়ার কথা বলে টাকা মারতাম সেই স্যারের কাছে পরি না। এই ঘটনার পর বাসায় বেশ উত্তম মধ্যম খেলাম। আব্বুর কাছে প্রমিস করলাম আর খারাপ কাজ করব না। এরপরের ঘটনা খুব দ্রুত ঘটে যেতে লাগল। আমি পড়ায় মন বসালাম। ভাল ছেলের ভুমিকায় অবতীর্ণ হলাম।
এর মধ্যে পিয়া অনেকদিন চেষ্টা করেছিল আমার সাথে কথা বলতে। আমি না শুনার ভান করতাম। জানি এটা নিষ্ঠুরের মতো হয়ে যাচ্ছিল কিন্ত আমি নিরুপায়। তাছাড়া আমি তখন জানিনা আমি ওকে ভালবাসি কিনা। শুধু জানি ওর সাথে কথা বলতে গেলেই আমার কেন জানি বুকে কাঁপত। এভাবে
ওকে ইগনর করার পর ও পরে আর আমার সাথে কথা বলতে আসত না। আমার খুব খারাপ লাগত তখন। আমি বিভিন্নভাবে চেষ্টা করতাম ওর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে কিন্তু পারতাম না। এর মধ্যেই আমাদের ১ম সাময়িক পরীক্ষা শেষ হল। রেজাল্ট ক্লাস ৯ এর তুলনায় হাজার গুন ভাল করেছিলাম। অল্পের জন্য এ+ পাই নাই। রেজাল্টের খুশিতে আমি আবার ছন্নছাড়া হয়ে গেলাম। আবার বাঁদরামি শুরু করলাম। আর বাঁদরামির ফল পেলাম হাতেনাতে। প্রি টেস্ট এ আবার খারাপ করলাম।
এবার চোখ কান বন্ধ করে পরতে লাগলাম। পিয়ার দিকে ফিরেও তাকাতাম না। ভাব নিয়ে চলতাম। কিন্ত একটা জিনিস আমাকে সবসময় কষ্ট দিত। ও যখন আমার সামনে আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে অন্য কারও সাথে কথা বলত। হাঁসি ঠাট্টা করত। আমার মন ওকে চাইত কিন্তু মস্তিস্ক আমাকে বাধা দিত। মনের থেকে আমি মস্তিস্ক কে বেশি পাত্তা দিয়েছিলাম।
আমার কেন জানি মনে হত ও আমাকে ভালবাসে। কিন্তু ভরসা পাই নাই। তাই ব্যাপারটা কারও সাথে আলাপ করি নাই। একদিন আমার এক ফ্রেন্ড এসে বলল,
“একজন জানতে চাইছে তুই কাউকে লাইক করিস কিনা?”
আমি বললাম , “না তো। কিন্তু কে জানতে চাইছে?”
“পিয়া”
আমি একটু ধাক্কা মতন খেলাম। পিয়া কেন জানতে চাইবে? তবে কি ও আমার প্রতি দুর্বল? নাহ তা কি করে হয়! ও তো আমার দিকে এখন ফিরেও তাকায় না। হয়ত আমার বন্ধুটাই আমাকে বোকা বানাতে চাইছে। আমি চুপচাপ ক্লাস এ ঢুকে গেলাম। আমি আসলে তখন নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। নাহলে নিজের মন কি বলতে চাচ্ছে তা বুঝতে পারতাম। পিয়া কি চাচ্ছে তাও বুঝতে পারতাম। কিন্তু ২ জনের কেউই একজন আরেক জনকে বুঝতে পারলাম না। ফলাফল হল ২ জনের মধ্যে কথা প্রায় হয়ই না। আমার তখন মোবাইল ছিল না। টেস্ট পরীক্ষার আগে আম্মুর মোবাইল তা ব্যবহারের জন্য চেয়ে নিলাম। পরীক্ষার সময় রাত জেগে পড়তাম। কিছু পারতাম না। সব নতুন নতুন লাগছিল। পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে গেলে ফ্রেন্ড দের সাথে কথা বলে রিলাক্স হতাম। এ কয়দিনে আমি পিয়ার কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। টেস্ট পরীক্ষা শেষের পর প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা শুরু হল। কিন্ত পরীক্ষার হলে ঢুকে আমার কেন জানি সব খালি খালি মনে হল। হটাত করে আবিষ্কার করলাম আজকে পিয়া আসেনি পরিক্ষা দিতে। ওর বান্ধবীদের জিজ্ঞেস করলাম। ওদের কাছ থেকে জানতে পারলাম যে ও অসুস্থ। মনটা খারাপ হয়ে গেল। সেদিন মন খারাপই হয়ে রইল।
নিজের অজান্তেই ও আমার মনে জায়গা করে নিয়েছে। আমি তা কখনই বুঝিনি। কিন্তু এস এস সি পরীক্ষার সময় এই অনুভুতি টা প্রবল হয়ে উঠল। সাব্জেক্টিভ পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আমি ওর আম্মুর মোবাইল নাম্বার যোগাড় করি। কারণ জানতে পেরেছিলাম যে ওর আম্মুর মোবাইল দিয়ে ও ফ্রেন্ডদের সাথে এসএমএস এ যোগাযোগ করে। সাহস করে একদিন মেসেজ পাঠিয়ে দিলাম। কিছুক্ষন পর ওর রিপ্লাই পেলাম। এভাবেই শুরু হয়ে গেল চ্যাট করা। প্রায় দেড় মাস ওর সাথে চ্যাট করলাম। ততদিনে আমরা খুব ভাল বন্ধু হয়ে গেছি। আমি মাঝে মাঝেই বিভিন্ন কৌশলে ওর কাছ থেকে জানতে চাইতাম ওর কোন পছন্দের মানুষ আছে কিনা। ও বারবার না বলত। মাঝে মাঝে ওকে বুঝাতে চাইতাম আমি ওকে কতটা ফিল করি। কিন্তু ও এসব জোক মনে করত। ১৪ এপ্রিল। পহেলা বৈশাখ। ওকে উইশ করলাম। কিছুক্ষণ চ্যাট করার পর ও বলল,
“গত বছর আমি আল্লাহর কাছে একটা জিনিস খুব করে চেয়েছিলাম। কিন্তু পাই নাই। মনে হয় এবছরও পাব না”
“কি চেয়েছিলে”
“বলা যাবে না”
“আমাকে বল। আমি তোমার ভাল বন্ধু”
“আরে তোমাকেই তো বলা যাবে না”
এই কথাটা শুনে আমি বুকে কিছু কিছু অনুভব করলাম। ওইদিন আর কথা বেশি বাড়ে নাই। পরেরদিন কথায় কথায় ও বলল ওর নাকি একজনকে পছন্দ কিন্তু বলতে পারে নাই। আমার কেন জানি মনে হল অই একজন আমিই। আমিও বললাম আমারও একজনকে খুব পছন্দ কিন্তু বলতে পারি না ভয়ে। যদি ফিরিয়ে দেয়……… আমি খুব জর করলাম ও কাকে পছন্দ করে জানার জন্য। ও নিজেও আমাকে জর করল আমারটা বলার জন্য। শেষে কেউই বললাম না।
তারপর এল সেই দিন। ২৮ এপ্রিল। আমি সকালে কম্পিউটার ক্লাস এ গেলাম। স্যার লেকচার দিচ্ছিল আর আমি পিয়ার সাথে চ্যাট। ওইদিন আমরা দুইজন ই খুব চাপাচাপি করছি নিজেদের পছন্দের মানুষের নাম এক্সচেঞ্জ করার জন্য। শেষমেশ আমিই আগে বললাম।
“আমার ভালবাসার মানুষটির নাম পিয়া”
তারপর আর ওর কোন রিপ্লাই নাই। আমি তো ভয়ে অস্থির হয়ে গেলাম। বলা উচিত হল কিনা টা ভাবতে লাগলাম। অনেকক্ষণ পর আমি নিজেই মেসেজ পাঠালাম। ওকে বললাম ওর পছন্দের মানুষের নাম বলতে। ওর রিপ্লাই পেয়ে আমি কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে ছিলাম। মোবাইলের স্ক্রিনের লেখাগুলো থেকে চোখ সরাতে পারছিলাম না। ওর পছন্দের মানুষটি আর কেউ নয় আমিই। আমি খুশিতে কি করব বুঝতে পারছিলাম না। জীবন টা সার্থক মনে হল। কনফার্ম হওয়ার জন্য ওকে আবার জিজ্ঞেস করলাম। ও বলল ওর পছন্দের মানুষটি আসলেই আমি। ও জোক করছে না। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম ও আমাকে আগের মতই চায় কিনা। ও বলল এই কথার উত্তর একটু ভেবে বল্বে।(আসলে পার্ট নিতেছিল। যখন আস্ক করছি তখনী ও রাজি ছিল। খামকা টেনশন খাওয়াইছে। ) পরে বিকালের দিকে ও মেসেজ দিয়ে জানাল ও রাজি আমার সপ্নকন্যা হতে, আমার ভাজ্ঞবতিহীন জীবনে ভাগ্যবতী হতে।
সেই থেকে শুরু। আজ তিন বছর হতে চলল। এখন আমাদের রেলগাড়িটা চলছেই। রেলগাড়িতে একটা একটা করে বগি বাড়বে সেই আশাতেই থাকি। দোয়া করবেন আমাদের জন্য যাতে রেলগাড়িটা না থামে।
আমার বাস্তব জীবনের কাহিনী। তাই যতটুকু সম্ভব বাস্তব রাখতে চেয়েছি। এজন্ন হয়ত গল্পটা রসকষহীন মনে হতে পারে কিন্তু অনুভূতিগুলো অকৃত্তিম।
-ছন্নছাড়া পথিক।
"নীরব ভালোবাসা" --- A Silent Love Story এটা একটা বাংলাদেশের কোন এক মধ্যবিত্ত পরিবারের একটি ছেলে ও একটি মেয়ের নীরব প্রেমের গল্প। মেয়ের পরিবার চিরাচরিত নিয়মে ছেলেটাকে গ্রহন করতে অস্বীকৃতি জানায়। স্বাভাবিকভাবেই মেয়ের পরিবার মেয়েটাকে বুঝানোর চেষ্টা করে যে ছেলেটার খুব একটা ব্রাইট ফিউচার নেই, তার সাথে সম্পর্ক রাখাটা বোকামি ছাড়া আর কিছু না। পরিবারের চাপে পড়ে একদিন মেয়েটা ছেলেটাকে বলে, "আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা কতটা গভীর? তুমি একটা কিছু অন্তত করো। তাছাড়া আমাদের সম্পর্ক কেউ মেনে নিবে না।" ছেলেটা কোন উত্তর খুঁজে পায় না। সে চুপ করে থাকে। মেয়েটা রাগ হয়ে চলে যায়। তারপরেও স্বপ্নবিলাসী ছেলেটা তাদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে, কিছুটা অন্জন'দা এর গানের মতো, "সাদা-কালো এই জন্জালে ভরা মিথ্যে কথার শহরে, তোমার-আমার লাল-নীল সংসার।" ছেলেটা একদিন হায়ার-স্টাডিসের জন্য বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যাওয়ার আগ-মুহূর্তে সে মেয়েটাকে বলে, "আমি হয়তো কথায় খুব একটা পারদর্শী না, কিন্তু আমি জানি যে আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তারপরেও তুমি যদি চাও, তোমার-আমার বিয়ের কথা আমি তোমার পরিবারকে একবার বলে দেখতে পারি। তুমি কি আমার সাথে সারাজীবন কাটাতে রাজি আছ?" মেয়েটা ছেলের দৃঢ়-সংকল্প দেখে রাজি হয়। ছেলেটা মেয়ের পরিবারকে অনেক বুঝিয়ে রাজি করে ফেলে। তারপর তাদের এনগেজমেন্ট হয়ে যায় এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে ছেলে প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশে ফিরলে তারপর তাদের বিয়ে হবে। এরপর ছেলেটা চলে যায় দেশের বাইরে।
মেয়েটা একটা অফিসে জব করা শুরু করে দেয়। এদিকে ছেলেটাও তার রিসার্চ-ওয়ার্ক নিয়ে দেশের বাইরে ব্যস্ত। তারপরেও তারা শত ব্যস্ততার মাঝেও ফোন আর ই-মেইলের মাধ্যমে তাদের ভালোবাসার অনুভূতি যতটা সম্ভব আদান-প্রদান করে। একদিন মেয়েটা অফিসে যাওয়ার পথে রোড-অ্যাক্সিডেন্ট করে। সেন্স ফিরে সে দেখতে পায় যে সে হাসপাতালে ভর্তি এবং বুঝতে পারে যে সে মারাত্মকভাবে আহত। তার বাবা-মাকে বিছানার পাশে দেখতে পায় সে। তার মা কান্না করতেছে তা বুঝতে পেরে যখন মেয়েটা কথা বলতে যায় তখন সে বুঝতে পারে যে তার বাকশক্তি লোপ পেয়েছে। ডাক্তারের ভাষ্যমতে মেয়েটা তার ব্রেনে আঘাত পাওয়ায় আজীবনের মতো বোবা হয়ে গেছে। একসময় মেয়েটা খানিকটা সুস্থ হয়ে বাসায় চলে আসে। এদিকে ছেলেটা তাকে বার বার ফোন করতে থাকে কিন্তু মেয়েটা বোবা বলে তার করার কিছুই থাকে না। মেয়েটা একদিন একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। সে তার কথোপোকথন-হীন এই জীবনের সাথে ছেলেটাকে আর জড়াতে চায় না। তার ফলশ্রুতিতে সে একদিন একটা মিথ্যা চিঠিতে লেখে যে সে আর ছেলেটার জন্য অপেক্ষা করতে পারবে না। তারপর মেয়েটা চিঠির সাথে তার এনজেজমেন্ট রিং ছেলেটার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়। ছেলেটা মেয়েটাকে হাজার-হাজার ই-মেইল করে কিন্তু তার কোন রিপ্লাই সে পায় না। ছেলেটা শত-শত বার ফোন করে কিন্তু মেয়েটার ফোন রিসিভ না করে নীরবে কান্না করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। একদিন মেয়েটার পরিবার বাসা বদল করে অন্য কোন এলাকায় নতুন কোন একটা পরিবেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় যাতে করে মেয়েটা কিছুটা হলেও এই দুঃস্মৃতী ভূলে যায় এবং সুখে থাকে। নতুন পরিবেশে মেয়েটা "সাইন-ল্যাংগুয়েজ" শেখে এবং নতুন জীবন শুরু করে। বছর দুয়েক পর একদিন মেয়েটার এক বান্ধবী এখানে চলে আসে এবং মেয়েটাকে বলে যে ছেলেটা দেশে ব্যাক করেছে। মেয়েটা তার বান্ধবীকে রিকুয়েস্ট করে যাতে ছেলেটা কোনভাবেই যেন তার এই অবস্থার কথা জানতে না পারে। তারপর কয়েকদিন পর মেয়েটার বান্ধবী চলে যায়। আরো এক বছর পর আবার একদিন মেয়েটার বান্ধবী মেয়েটার কাছে একটা ইনভাইটেশন কার্ড নিয়ে চলে আসে। মেয়েটা কার্ড খুলে দেখতে পায় যে এটা ছেলেটার বিয়ের ইনভাইটেশন কার্ড। মেয়েটা অবাক হয়ে যায় যখন পাত্রীর জায়গায় তার নিজের নাম দেখতে পায়। মেয়েটা যখন তার বান্ধবীর কাছে এ সম্পর্কে কিছু জানতে চাইবে তখন সে দেখতে পায় যে ছেলেটা তার সামনে দাঁড়িয়ে। ছেলেটা তখন "সাইন ল্যাংগুয়েজ" ব্যবহার করে মেয়েটাকে বলে, "I've spent a year's time to learn sign language. Just to let you know that I've not forgotten our promise. Let me have the chance to be your voice. I Love You." এই বলে ছেলেটা আবার সেই এনগেজমেন্ট রিং মেয়েটাকে পড়িয়ে দেয়। কয়েক বছর পর মেয়েটা আবার হেসে উঠে। এ যেন এক নীরব ভালোবাসার নীরব হাসি।

শুক্রবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৮

যেনে নিন ভালোবাসায় ব্যার্থতা এড়ানোর কয়েকটি টিপস

হৃদয় ঘটিত সম্পর্কের ব্যার্থতা এড়ানোর জন্য ! আধুনিক মনোবিশারদরা প্রেমিককূলকে যে পরামর্শ দিয়েছেন । আজ তার ২য় অংশ আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো । আশা করি আপনাদের কাজে আসেবে
দুই নৌকায় পা দিবেন না !


প্রেম প্রেম খেলা করার মানসিকতা অনেক তরুন তরুণীরই থাকে । এছারা অনেক একাধিক সঙ্গীর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করেন । প্রকৃত পক্ষে এদের মাঝে সত্যিকারের ভালবাসার খুবই অভাব থাকে । একাধিক প্রণয়ীর সাথে প্রেম চালিয়ে যাওায়াকে তারা খুবই চালাক চাতুরী এবং বাহাদুরির কাজ বলে মনে করেন !
ন্ধু-বান্ধবীদের কাছে রসিয়ে রসিয়ে এই গল্প বলে বেশ আত্মপ্রসাদ ভোগ করে । আসলে এরা বোকার স্বর্গে বাস করছে । তাদের এই বিশ্বাসঘাতকতা এবং চাতুরী খুব বেশিদিন গোপন থাকে না ! আর তাদের জন্য অপেক্ষা করে চরম আঘাত । প্রেমে সফলতার জন্য একাগ্রতা এবং বিশ্বস্ততা একান্ত প্রয়োজন । আপনার সামান্য বেখেয়ালকেও আপনার হৃদয় সঙ্গী সিরিয়াস ভাবে গ্রহন করে নিতে পারে । তার প্রতি কোন রকম অনীহা , তাচ্ছিল্য , অমনোযোগী হবেন না কারন এগুলো তাকে ভীষণভাবে আহত করতে পারে । পরিনামে ভেঙ্গে জেতে পারে দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক এক দিনেই । আসলে হৃদয় আদান প্রদান জনিত মোহের আবেগ অনেক জন নর কিংবা নারী এমন ভাবে উদ্বেলিত হয়ে যায় ! যে এর ফলে তারা স্বাভাবিক বিবেক বুদ্ধি প্রায় সম্পূর্ণ রূপে হারিয়ে ফেলে । অধিকাংশ ত্রিভুজ প্রেমের পরিনাম হয় অত্যন্ত করুন । কেউ কেউ নিরবে দূরে সরে যায় ! আবার কেউবা ধীরে ধীরে নিজের জীবন ধ্বংস করে ফেলে দেয় । আবার কেউ কেউ হয়ে উঠে প্রতিশোধ প্রবন ।

পরিণতির ব্যাপারে তাড়াহুড়া নয় !

অনেকে প্রেম করার সাথে সাথে তাড়াতাড়ি হেস্ত নেস্ত কিছু একটা করে ফেলার চেষ্টা চালানো সুরু করেন । এতা অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসফলতা বয়ে নিয়ে আসে ।

প্রেমের সুরুতে বেসি তাড়াহুড়া করলে বিষয়টি আশেপাশের লকজনের চোখে ধরা পরে যেতে পারে । এমনকি ভেস্তে যেতে পারে ভালবাসার যত্নে গড়া বাগান । কারো সাথে হ্রিদয়ের সম্পর্ক গড়তে গিয়ে প্রথম থেকেই পরিকল্পনা মাফিক ধীরে সুস্তে অগ্রসর হন । এর ফলে ছ্যাঁকা খাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে ।

কথা বার্তায় আধুনিকতা !

দৈহিক সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়েও কেবলমাত্র আধুনিকতা বর্জিত মূর্খ কথাবার্তার কারনে অনেক সঙ্গীরা, সঙ্গিনী আলগোছে কেটে পড়ে । কেবলমাত্র কথা বার্তার মাধ্যমেই একজন বাক্তির ব্যাত্তিত, রুচিজ্ঞান, চরিত্র, বুদ্ধিমত্তা, সামাজিক অবস্থান, পারিবারিক স্ট্যাটাস- সব প্রকাশ হয়ে পারে । উপরে উপরে চেহারা সৌন্দর্য এবং পোশাক পরিচ্ছদের যতো আবরণই তৈরি হোকনা কেন কাঙ্ক্ষিত সঙ্গীর মুখমুখি হবার সাথে সাথেই মুখোশ খুলে যেতে বাধ্য । Bangla SMS কোন কোন পরুষ রুপসর্বস্ব নারীদেরকে সঙ্গিণী হিসাবে গ্রহন করলেও ! মেয়েরা সাইনবোর্ড সর্বস্ব পুরুষ পছন্দ করে না । কারন নারীর কাছে আদর্শ প্রেমিক পুরুষ হলো বাক্তিত্তবান, রুচিশীল , আত্মবিশ্বাসী , সুরসিক পুরুষ। কথা বার্তায় আধুনিক হওয়া টা খুব কষ্টের কিছু নয় । যে কোন নারী পুরুষ একটু সচেতন হলেই এই গুনটি অরজন করে নিতে পারে অল্পদিনের চেষ্টাতেই ।

রুচিশীল পারফিউম ব্যাবহার করুন !

বিপরীত লিঙ্গকে আকৃষ্ট করার জন্য প্রাচীন কাল থেকেই সুগন্ধির ব্যাবহার চলে আসছে । এছাড়াও স্নিগ্ধ এবং প্রসান্তিদায়ক সুগন্ধিও রয়েছে যেগুলা বাক্তিত্তকে প্রকাশ করতে সাহায্য করে । আপনাকে উগ্র এবং উত্তেজক গন্ধ জা দিয়ে ব্যাবহার করতে হবে । পরিবেশ অনুযায়ী, রুচিশীল হালকা পারফিউম ।

এক ধরনের সুগন্ধি সবসময় ব্যাবহার করবেন না । দুই তিন রকমের রাখুন এবং অদল বদল করে ব্যাবহার করুন । আপনার সঙ্গীর বা সঙ্গিনি কোনটি পছন্দ করছে একটু সজাগ থাকলে সেটাও বুঝে নিতে পারেন এবং তখন থেকে সেটাই বেশী ব্যাবহার করেন ।

আবেগে ভেসে যাবেন না !

প্রেমে পরলে এধরনের হাজারো মানসিক চাঞ্চল্য এসে ভর করে নারী পুরুষের ওপর । প্রেমপর্বে অস্বাভাবিকতার পরিণাম যার যত বেশী হবে ! প্রেমে সফলতার সম্ভাবনা তার তত কমে যাবে । অতএব কারো সাথে হৃদয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হলে আবেগে ভেসে যাবেন না । যত বেশী নিয়ন্ত্রণ হারাবেন আবেগের ওপর ! তত বেশী অস্বাভাবিক হবে আপনার আচরন ! যার ফলে আপনি ততো বেশী ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহন করবেন । প্রেমে সফলতার জন্য স্থির সিদ্ধান্ত, সঠিক পদক্ষেপ গ্রহন করা অত্যন্ত জরুরী । আপনি নিঃস্বার্থভাবে আপনার প্রিয়জনকে ভালোবাসার প্লাবনে হাবুডুবু করে দিলেও তার অবস্থা আপনার মত নাও হতে পারে । সুতরাং বিবেক যুক্তিকে সতেজ রেখে অগ্রসর হবার চেষ্টা করুন । এর গলে প্রেমে সফলতার সম্ভাবনাও যেমন বেড়ে যায় । তেমনি আকস্মিক বিচ্ছেদের সম্ভাবনাও কমে যাবে ।

Love Guru 1

watch2